১৪৫০-এর দশকে জার্মানির মাইন্‌জ শহরে জোহান গুটেনবার্গের ছাপাখানার উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। এটি ইউরোপীয় সমাজে একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং বৌদ্ধিক পরিবর্তন ঘটায়। 
মুদ্রণ বিপ্লবের পটভূমি বা কারণ নিম্নে আলোচনা করছি: 

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য চর্চার প্রসার:
মধ্যযুগের শেষে ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। রেনেসাঁর প্রভাবে মানুষ প্রাচীন গ্রিক ও রোমান পাণ্ডুলিপি অধ্যয়নে মনোনিবেশ করে। কিন্তু এই পাণ্ডুলিপিগুলোর সীমিত সংখ্যা এবং হাতের লেখায় প্রস্তুতকৃত বইগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল, যা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য ছিল না। 

পাণ্ডুলিপি সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতা:
পাণ্ডুলিপি বই তৈরির প্রক্রিয়া শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ ছিল। ধর্মীয় গ্রন্থসহ অন্যান্য বিষয়বস্তুর প্রচার এই সীমাবদ্ধতার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। 

রেনেসাঁ ও মানবতাবাদী আন্দোলন:
ইতালির রেনেসাঁর সময়ে মানবতাবাদী চিন্তাধারা জ্ঞানের স্বাধীনতা ও প্রসারকে গুরুত্ব দেয়। এটি একটি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চাহিদা তৈরি করে। 

বাণিজ্য ও অর্থনীতির প্রসার:
মধ্যযুগের শেষে ইউরোপের বাণিজ্যিক অর্থনীতি শক্তিশালী হতে থাকে। ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের সঙ্গে শিক্ষিত বণিক ও নগরবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যারা বইপত্র পড়ার প্রতি আগ্রহী ছিল। 

কাগজের সহজলভ্যতা:
কাগজ উৎপাদন প্রযুক্তি চীনে আবিষ্কৃত হয় এবং মুসলিম বিশ্বের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছায়। ১৪শ শতকের দিকে কাগজের সহজলভ্যতা বই উৎপাদনের প্রাথমিক শর্তগুলো পূরণ করতে সহায়ক হয়। 

গুটেনবার্গের উদ্ভাবন:
জোহান গুটেনবার্গ ধাতব ছাঁচে ছাপার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা তৎকালীন প্রযুক্তির এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তাঁর উদ্ভাবিত মুদ্রণযন্ত্রে বই মুদ্রণ প্রক্রিয়া সহজ ও সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে। প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ ছিল গুটেনবার্গ বাইবেল। 

ধর্মীয় প্রভাব:
মুদ্রণ প্রযুক্তি ইউরোপে প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মার্টিন লুথারের মতো ধর্মীয় নেতারা মুদ্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁদের ধর্মীয় মতবাদ ছড়িয়ে দেন। 

উপসংহার:
মুদ্রণ বিপ্লব ইউরোপের সমাজে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে। এটি শুধু বইয়ের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করেনি, বরং গণশিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করেছিল। এটি পরবর্তী কালে শিল্পবিপ্লব এবং আধুনিক বিশ্বের গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

By SUKANTA

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *