বিশ শতকে ভারত তথা বাংলায় জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে এক নতুন ধারা সংযোজিত হয়। বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে বাংলায় বিপ্লববাদের সূচনা হয়। সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ বীরদর্পে এগিয়ে আসতে থাকে। নারীদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবাদর্শ বিস্তারে লীলা নাগ (রায়)-এর ভূমিকা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 

লীলা নাগ (রায়)-এর অবদান:
পূর্বপরিচয়: লীলা নাগের জন্ম হয় ঢাকায়। বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর বাংলায় বিপ্লববাদী আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। প্রকৃতপক্ষে বাংলার নারীসমাজকে সুসংগঠিত করাই ছিল তাঁর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। 

দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা: বাংলার নারীসমাজ যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে সশস্ত্র ব্রিটিশবিরোধী মুক্তিসংগ্রামে যোগদান করতে পারে তার জন্য লীলা নাগ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। সশস্ত্র আন্দোলনের উপযুক্ত করে নারীদের গড়ে তোলা, নারীদের মধ্যে আত্মচেতনা ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা, উচ্চশিক্ষায় নারীদের উৎসাহ দান করা প্রভৃতি ছিল দীপালি সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য। 

কার্যকলাপ: নারীদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের উপযোগী করে গড়ে তোলা ও নারীশক্তির জাগরণে লীলা নাগ সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি দীপালি সংঘে শরীরচর্চা ও অস্ত্রশিক্ষা প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। এ ছাড়া মেয়েদের হস্তশিল্প, সৃজনমূলক সামগ্রীর প্রদর্শন করতে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে দীপালি শিল্প প্রদর্শনী। 

শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা: লীলা নাগের উদ্যোগে ঢাকায় একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে এর বহু শাখাপ্রশাখা গড়ে তোলা হয়। তাঁর যোগ্য সহকর্মী রেণুকা সেন ছাত্রীদের জন্য একটি হোস্টেল ও কলকাতায় দীপালি সংঘের একটি শাখা স্থাপন করেন। 

     লীলা নাগ (রায়) বাংলার নারীসমাজের মধ্যে জাতীয় চেতনা ও সশস্ত্র বিপ্লববাদী আদর্শ জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই সকল কারণে বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়।

By SUKANTA

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *